
মোহাম্মদ আবু দারদা, ফেনী।
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শতবর্ষী ইয়াকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫১ জন শিক্ষার্থী চরম দুর্ভোগ ও ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর ভেঙে ফেলায় এবং নবনির্মিত টিনশেড ঘরটি ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চলছে প্রায় ৬২ বছরের পুরোনো একটি জরাজীর্ণ ভবন ও পার্শ্ববর্তী এতিমখানার কক্ষে।
মূল দোতলা ভবনটি নির্মাণের মাত্র ১০ বছরের মাথায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় এবং পরবর্তীতে তা ভেঙে ফেলায় এই সংকটের সূত্রপাত হয়। জানা যায়, ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের জন্য ২০১০ সালে একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে ২০২০ সালে কর্তৃপক্ষ সেটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে এবং সবশেষ ২০২৫ সালের জুন মাসে নিলামের মাধ্যমে ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে ১৯৬৩ সালে নির্মিত দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে দুটি শ্রেণির কার্যক্রম এবং বাকি শ্রেণিগুলোর পাঠদান পার্শ্ববর্তী ইছহাকীয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসা ভবনের একটি কক্ষে পরিচালিত হচ্ছে।
শিক্ষার্থী সংকট নিরসনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৪৮৫ টাকা ব্যয়ে তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ভবনটিতে দরজা, জানালা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ফ্যান বা লাইট কিছুই লাগানো হয়নি। ফলে নতুন ভবন থাকা সত্ত্বেও সেটি কোনো কাজে আসছে না। এর পাশাপাশি বিদ্যালয়ে নেই ব্যবহার উপযোগী শৌচাগার এবং সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা, যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আব্দুল করিম নামে একজন অভিভাবক বলেন, “প্রতিষ্ঠানের টয়লেট ব্যবহার করার মতো অবস্থায় নেই এবং পানি বাইরে থেকে আনতে হয়। ছেলেমেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ভবনে পড়াশোনা করছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামীতে স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তি কমে যাবে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকলিমা আক্তার জানান, “নতুন টিনশেড ভবনে দরজা-জানালা, বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দ্রুত সরবরাহ করা হলে সেখানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। আমরা একটি নতুন স্থায়ী ভবনের জন্যও আবেদন করেছি।” বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহীনা আক্তারও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আলী আজগর বলেন, “যেহেতু এলজিইডির মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে শ্রেণিকক্ষগুলো নির্মিত হয়েছে, তাই এগুলো ব্যবহারোপযোগী করে দেওয়ার দায়িত্বও তাদের। কিন্তু এখনো তা হয়নি। আমি উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডিকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।”
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান জানান, নতুন একটি স্থায়ী ভবনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্মিত টিনশেড ভবনের দরজা-জানালা ও অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করে ভবনটি পাঠদানের উপযোগী করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।