ফেনীতে সাবেক চার এমপিসহ ২৬৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা

মোহাম্মদ আবু দারদা, ফেনী।

​ফেনীতে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে জেলার সাবেক চার সংসদ সদস্যসহ ২৬৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। ঘটনার এক বছরেরও বেশি সময় পর, রোববার (১৭ আগস্ট, ২০২৫) ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অপরাজিতা দাশের আদালতে এই আবেদন করেন মো. জামাল উদ্দিন গাজী নামের একজন ব্যবসায়ী। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে ফেনী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

​আদালত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মামলার আবেদনে প্রধান আসামি করা হয়েছে ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে। এছাড়া অভিযুক্তদের তালিকায় আরও রয়েছেন ফেনীর সাবেক তিন সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এবং শিরীন আখতার। তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের একাধিক পদধারী নেতাকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

​মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বাদী মো. জামাল উদ্দিন গাজী গত বছরের ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার একটি অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। তার অভিযোগ, এ সময় উল্লেখিত আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্রসহ মিছিল নিয়ে কর্মসূচির দিকে অগ্রসর হন এবং গুলি চালান। বাদী প্রাণ বাঁচাতে মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়কের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে আসামিরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাইফেল ও শটগান দিয়ে গুলি করে। এতে তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচে ও গোড়ালিতে দুটি গুলি লাগে, যার একটি বুলেট হাড়ের ভেতরে আটকে যায়।

​অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামিদের গুলিতে বাদীর ডান হাতের কব্জি ও কনুইয়ে একটি করে, বাম হাতের কব্জিতে পাঁচটি, কনুইয়ে একটি এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আরও চারটি গুলি লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা তাকে লাঠি, লোহার রড ও রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে এবং মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে অ্যাপোলো হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করান, যেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার শরীর থেকে বুলেট বের করা হয়।

​মামলার আবেদন করতে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে বাদী উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকা এবং আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে সময় লাগায় তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তিনি জানান, গত ২৬ জুন তিনি ফেনী মডেল থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেছিলেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাহার গ্রহণ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। বাদীর ভাষ্যমতে, ওসি তাকে পরে ফোনে ডাকার কথা বললেও দীর্ঘ সময়ে যোগাযোগ করেননি এবং বারবার যোগাযোগের পর জানান যে, ‘উপর থেকে নির্দেশ আছে ৪ আগস্টের কোনো মামলা নেওয়া যাবে না।’ থানায় আইনি সহায়তা না পেয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করেন।

​এ প্রসঙ্গে মামলার বাদী মো. জামাল উদ্দিন গাজী বলেন, ‘আমার শরীরে নয়টি গুলি লেগেছিল। এজন্য দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। এখনো একটি অস্ত্রোপচার বাকি রয়েছে। অসুস্থতার কারণে মামলার আবেদন করতে দেরি হয়েছে। প্রায় তিন মাস আগে ফেনী মডেল থানায় মামলার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু পুলিশের গড়িমসির কারণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত আদালতে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।’

​তবে থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘মহিপালের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা হয়েছে। এমন কিছু হলে এসব মামলা তো আর হতো না। আদালতে মামলা করতে গিয়ে বাদী থানায় মামলা না নেওয়ার মতো একটি মিথ্যে তথ্য উল্লেখ করেছেন। বাস্তবে এমন কিছুই হয়নি।’

এ রকম আরো সংবাদ

আমাদের সাথে থাকুন

0FansLike
0SubscribersSubscribe

সর্বশেষ সংবাদ