রুকন উদ্দিন কেন্দুয়া, (নেত্রকোণা)।
নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় প্রথমবারের মতো মহাআয়োজনের মধ্যদিয়ে দিনব্যাপী শুভ উদ্বোধন হয়েছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতি "কিচ্ছাপালা"।
অনুষ্ঠানটির শুভ উদ্বোধন করেন কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমদাদুল হক তালুকদার, যিনি কেন্দুয়ায় যোগদানের পর থেকেই কেন্দুয়ার সংস্কৃতিকে কিভাবে দেশ ও দেশের বাইরে পরিচিতি করানো যায় সেই প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাঈম-উল ইসলাম চৌধুরী, দেশবরেণ্য পালাগান গায়ক যার বাড়ি কেন্দুয়ায় কদ্দুস বয়াতী, কেন্দুয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আবুল কালাম আল আজাদ, বিভিন্ন "কিচ্ছাপালা" দলের বয়াতীগণ সহ সুধীজন।
গ্রাম বাংলার প্রায় হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতির শিকড়কে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে উপজেলা প্রশাসন প্রথমবারের মতো বৃহত্তর "কিচ্ছাপালা" উৎসবের আয়োজন করেছে।
গ্রামীণ সমাজের ঐতিহ্যের জনপ্রিয় লোককথা "কিচ্ছাপালা" উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য ছিল- "কথার নাই মাথা-ব্যাঙে চিঁড়া খায়, বাপ বিয়া হরার আগে পুত হউর বাড়িত যায়"।
শনিবার ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ৮ নভেম্বর ২০২৫ ইং দুপুর ১২টার দিকে কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে "কিচ্ছাপালা" উৎসবের শুভ উদ্বোধন করা হয় চলবে সারারাত ব্যাপী।
"কিচ্ছাপালা" পরিবেশন করেন দেশবরেণ্য কদ্দুস বয়াতি, সায়িক সিদ্দিকী, দিলু বয়াতী, আশিক বয়াতী, অলিউল্লাহ বয়াতী, সবুজ বয়াতী, জসিম বয়াতী, মনসুর বয়াতী, হামিদ বয়াতী, শামীম বয়াতী, মজনু বয়াতী, উসমান বয়াতী, আনোয়ারা বয়াতী, ফজল করিম বয়াতী ও খোকন বয়াতী এবং তার দল। তাদের কণ্ঠে বেজে ওঠে গ্রামীণ বাংলার লোকগাথা "কিচ্ছাপালা" যা বাংলার ইতিহাস, সমাজ, প্রেম, মানবতা ও নৈতিকতার গল্প ফুটে ওঠে সুর ও বাদ্য-বাজনার তালে তালে।
জাসাস-কেন্দুয়া, চর্চা সাহিত্য আড্ডা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঝংকার শিল্পীগোষ্ঠী, আব্দুল মজিদ তালুকদার শিল্পীগোষ্ঠী, মঙ্গলঘর পরিসর ও প্রাণে প্রাণে বইকুঞ্জ সহযোগী আয়োজক এবং মিডিয়া পার্টনার ছিল কেন্দুয়া প্রেসক্লাব, কেন্দুয়া রিপোটার্স ক্লাব ও উপজেলা মিডিয়া ক্লাব।
ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, আমাদের এই মাটির মানুষ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এ-সব বাংলার আত্মা। "কিচ্ছাপালা" কেবল গান নয়, এটি দেশের ইতিহাস, নৈতিকতা ও জীবনের শিক্ষার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। আধুনিকতার যুগে লোকজ সংস্কৃতির ঐতিহ্য প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে, তাই নতুন প্রজন্মকে নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে পরিচিত করানোই এই আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আজকের এই "কিচ্ছাপালা" উৎসব কেন্দুয়াকে আবারও সাংস্কৃতিক চর্চার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করবে। আজকের উৎসবে যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা লোকসংস্কৃতির ধারক ও বাহক।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তারা জানেই না বাংলার প্রকৃত রূপ কি ছিল, এই কিচ্ছাপালা'র আয়োজনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও তাদের ধারণা হবে।
দেশবরেণ্য পালাগান গায়ক কদ্দুস বয়াতী বলেন, আমার বাড়ি কেন্দুয়া উপজেলার ১০নং কান্দিউড়া ইউনিয়নের রাজিবপুর গ্রামে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠান করেছি, সেই ছোটবেলা থেকেই আজ পর্যন্ত দেশের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আমি কদ্দুস বয়াতী "কিচ্ছাপালা" পরিবেশন করিনি।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমদাদুল হক তালুকদার একজন সাংস্কৃতিক মনা ব্যক্তি, তিনি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সবসময় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মানবিক চর্চার প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন। জালাল মেলা, জালাল মঞ্চ নির্মাণ সহ এই প্রথমবারের মতো কিচ্ছাপালা" এর আয়োজন কেন্দুয়াবাসীর জন্য গর্বের। কিচ্ছা আমাদের লোকসংস্কৃতির প্রাণ। আজকের এই উৎসব প্রমাণ করে মানুষ এখনো মাটির গান শিকড়ের গান ভালোবাসেন। আমি উপজেলা প্রশাসন, ইউএনও এবং আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য।