ঊর্বশীর পদচিহ্ন

লেখক: মো:তারেক আজিজ, সহকারী শিক্ষক (বাংলা) 

আজি অন্তরীক্ষে শুক্লা দ্বাদশী

পৌষের প্রায় পূর্ণ শশী।

এমন দিনে জলধির উন্মাদ নৃত্য দেখবো বলে

হোটেল কক্ষ ছাড়িলাম তিনজনে নিরবে।

আসিলাম সমুদ্রতটে,সুগন্ধা বীচে

এত মানবের ভীড়ে তুমি তোমারি

উন্মাদ নৃত্য শুধা রচিবে কেমনে?

মুহুর্তে শুনিলাম তিল ঠাঁই নাই

রিসোট কিংবা অতি সাধারণো

কোনো গেস্ট হাউজে।

তিনের বিজ্ঞ জনে

মুচকি হেসে হাফ ছাড়িলেন!

বলিলেন, ভাগ্যিস বুকিং

দিয়েছি পাঁচ দিনের!

প্রজা হয়ে ঘুরেছি নিজ ভূমে,

আর কত!পূর্ণ শশী তৃতীয় প্রহরে যখন

কোমলতায় প্রভাতময় আভায়,

যেন চিকচিক বালুরাশি দিতেছে কিরণ।

এমন প্রহরে কে-না চায়?

রাজার পাটে জোছোনা বিলাসে মত্ত হতে!

সে জন্য পেতে তো হবে-

সান লাউঞ্জার কিংবা বীচ চেয়ার!

এত জনো মানবে ফাঁকা রহিবে কী-তা?

আমি তো বেশ নাছোড় বান্দা,

রজনীর তৃতীয় প্রহরের প্রায় শেষে মিলিলো তা।

প্রচুর ক্লান্ত তিনো জনে,

বীচ চেয়ারে হেলানা দিয়ে

কফিতে চুমুক আর সিগারেটে

ধোঁয়ায় মিশে নিমিষে ক্লান্তি যায় কেটে।

নীল জলরাশির অবিরাম উন্মাদ নৃত্যে

তীরের বুকে জমেছে ফেনা।

সর্পদংশনে যেমন কিশোরীর

দেহ নীলাভ আর মুখে জমে তা।

নিশির চার প্রহর শুরুর ক্ষণে,

প্রায় ক্লান্ত ভাবে তটে আছড়ে পড়ে জলরাশি।

মৃদুমৃদু আলো ছড়িয়ে চলেছে শশী,

এমন অবসন্ন সময়ে তটে এলো ঊর্বশী।

বেশ খানিকটা জলের ধারে

ক্লান্ত দেহে দাঁড়িয়েছে সে।

সমুদ্র নিস্তেজ ধীরে ধীরে

দিতেছে ধুয়ে তার পদ যুগল।

পরনে কালো শাড়ি,কপালে কালো টিপ

জোছনার মৃদু মন্দ আলোয়

অধর যেন তার ফুটন্ত গোলাপ!

নিথর ক্লান্ত দেহ,তবু মুখে হাসি

কারে যেন খুঁজে ফিরে চাতক দুটি আঁখি!

অবুঝ আমি বুঝিলাম–

আহা,বেচারা!প্রিয়জন হারিয়েছে বুঝি?

ত্রি-দিবস রজনী যাপন করেছেন যিনি

এই সুগন্ধা বীচে বলিলেন তিনি,ও রাতের রানী!

নিমিষেই সমুদ্র যেন হিমালয় সম

উচ্চতায় আছড়ে পড়িলেন জনপদে।

যত সভ্যতার বেশধারী,

পশুত্ব গোপনকারীর বেশভূষা

হরণ করিবার তরে।

জাতির কাণ্ডারী সভ্যতার নামধারী

হিংস্রতা লালনকারী নগ্ন মাতালের স্বরূপ যত

তৎক্ষণাৎ ফুটে উঠিলো উর্বশীর অবগুণ্ঠে।

রেখেছিস কারে ভোগের পণ্য করে?

অতি আধুনিক কালে ও কেন পণ্য

জ্ঞান করিস তাদের?

হয়তো কোনো একদিন সে ছিলো

অসহায় বাবার রাজকন্যা!

যার মুখো পানে চেয়ে সে পিতা

ভুলিতো ক্ষুধার জ্বালার লাঞ্ছনা।

হতে-ও-তো পারে আমারি মত

কোনো ভাইয়ের সে বোন।

তারি গর্ভে জন্ম নিতে পারে

ইতিহাস সৃষ্টিকারী কিংবা জাতির

পথপ্রদর্শক কোনো মহানায়ক!

রাতের চতুর্থ প্রহর শেষে

ঊষার দুয়ারে দেখি আভা।

ফিরে দেখি সেথায় নেয় সে ঊর্বশী!

শশীর সাথে সাথে সে-ও

হয়েছে অচেনা কারো সহবাসী।

পদ চিহ্ন রেখে চলে গেছে উত্তরে,

সমুদ্রের শান্ত স্নিগ্ধ জল

নেমেছে অনেকটা তল।

ভাটার জল এতটায় শান্ত,

মুছে ফেলার সাধ্য নেয় ঊর্বশীর পদচিহ্ন!

মোর দেখা ঊর্বশীর-আর,

তোদের রাতের রানীর পদচিহ্ন হায়

তার কষ্টের পাহাড়,যার সম কিছু নায়।

বালির বুকে আঁকা স্মৃতিটুকু-ও

পৃথিবীর বুক হতে কিছু পরে,

উন্মাদের মত নৃত্যে মুছে দিবে

সর্বগ্রাসী রাক্ষসী মহাসমুদ্র।

এ রকম আরো সংবাদ

আমাদের সাথে থাকুন

0FansLike
0SubscribersSubscribe

সর্বশেষ সংবাদ