সোনাগাজীতে সেতু রক্ষার বালু বিক্রি, প্রশাসনের সরেজমিন পরিদর্শন

মোহাম্মদ আবু দারদা, ফেনী।

ফেনীর সোনাগাজীতে কালিদাস পাহালিয়া নদী থেকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও নদী ভাঙনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সেতু রক্ষার জন্য উত্তোলিত বালু বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ সকালে ফেনী জেলা প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের মধ্যে চরম বাকবিতণ্ডা হয়, যা সম্ভাব্য বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

​জানা যায়, কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা আহম্মদ সেতুর গার্ডার ধসে যাওয়ায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি রক্ষায় নদীর গতিপথ সোজা করে জিও ব্যাগ ফেলার জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়। এই কাজের সুবিধার্থে নদীর জেগে ওঠা চর থেকে ৩৪ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, নির্দিষ্ট চর থেকে বালু না তুলে নদীর মূল অংশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে তা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। এই অভিযোগে স্থানীয়দের পক্ষে নবাবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ভূঞা গত ২৫ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

​এই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকালে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন) রোমেন শর্মা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনজুর আহসান ও সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিগ্যান চাকমা সরেজমিন পরিদর্শনে যান। কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই স্থানীয়রা দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলমের বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর, ভূয়া-ভূয়া’ এবং ‘বালু উত্তোলন বন্ধ কর, করতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিগ্যান চাকমা উভয় পক্ষকে শান্ত করেন।

​অভিযোগকারী জহির উদ্দিন ভূঞা বলেন, “নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম ও ফরহাদনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা বেলায়েত হোসেন বাচ্চু নদীর মূল অংশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছেন। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে তারা লক্ষ লক্ষ টাকার বালু বিক্রি করেছেন, যা দিয়ে এলাকার অনেকের পুকুর ও নিচু জমি ভরাট করা হয়েছে।”

​সাইদুর রহমান নামে একজন স্থানীয় যুবক বলেন, “নদী সোজা করার নামে যেভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে, তাতে আমাদের রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর ও সেতুটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। দুই পাড়ের বাসিন্দারা এখন আতঙ্কে আছে।” এ কারণে তিনি সেতু রক্ষার কাজটি সেনাবাহিনীকে দেওয়ার জন্য দাবি জানান।

​তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নবাবপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জহিরুল আলম বলেন, “সেতু রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে, কিন্তু নদী ড্রেজিংয়ের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। আমি জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মতো বালু উত্তোলন করে নির্দিষ্ট স্থানে ডাম্পিং করছি। বাণিজ্যিক কাজে এক ফুটও বিক্রি করা হয়নি। রাজনৈতিক বিরোধের কারণে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে।”

​এই ঘটনায় অভিযুক্ত ফরহাদনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বাচ্চু বলেন, “আমি শুধু বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার, বোট ও যন্ত্রপাতি ভাড়া দিয়েছি। বালু বেচা-বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।”

​পরিদর্শন শেষে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন) রোমেন শর্মা বলেন, “নদী সোজাকরণ ও জিও ব্যাগ ভরাটের জন্য বালু তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা প্রাথমিক তদন্ত করেছি। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। কোনো ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেলে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ রকম আরো সংবাদ

আমাদের সাথে থাকুন

0FansLike
0SubscribersSubscribe

সর্বশেষ সংবাদ